পাকিস্তান জাতি হিসেবে কতটা নির্লজ্জ? পাকিস্তান সেনাবাহিনী কি তাদের দুরবস্থার জন্য দায়ী? The Reason Behind Pakistan’s Downfall



পাকিস্তান তাদের ৮০ বছরের ইতিহাসে সবথেকে বাজে ইকোনমিক ক্রাইসিস ফেইস করছে। ১৯৭১ এ বাংলাদেশের কাছে হেরে যাওয়াতেও এত বড় ক্রাইসিস তখন ছিল না। কিন্তু কিভাবে? দেখেন ১৯৭২ সালে যখন পাকিস্তানের ফরেন রিজার্ভ ছিল প্রায় ২৭ বিলিয়ন ডলার সেখানে এক হল এই কয়দিন আগেই একটা রিপোর্টে তাদের রিজার্ভ আছে মাত্র ২.৯ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ তাদের এই রিজার্ভ দিয়ে মাত্র কয়েক সপ্তাহ জ্বালানি তেল আর মেডিসিনের ব্যবস্থা করা যাবে। IMF এর কাছে পাকিস্তান বেইল আউট এর জন্য 1.1 বিলিয়ন ডলার লোন চেয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত IMF পাকিস্তানকে কতবার লোন দিয়েছে জানেন? ২২ বার। আর এই কারণে IMF ও কিন্তু তাদের ওপর খুব বেশি ভরসা করতে পারছেনা। পাকিস্তানকে এ কারণে IMF শর্ত দিয়েছে এক্সটার্নালি ৬ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলার জোগাড় করতে, আর সেটার জন্যই পাকিস্তান হাত পাতছে সৌদি আরব, আরব আমিরাত ও কাতারের কাছে। মানে সহজ কথায় IMF আর পাকিস্তানকে একা লোন দেয়ার সাহস পাচ্ছে না। আর এসবের সাথে ট্যাক্স এর পরিমাণ ১৮%, ইম্প্রেশন ১৩%, ১.৫ বিলিয়ন ডলারের লোন শোধ না করায় চাইনিজ ডেভেলপাররা মাল্টিপল পাওয়ার প্লান্ট বন্ধ করে দিয়েছে। অর্থাৎ এক সময়কালের সাবকন্টিনেন্টের সুপার পাওয়া গুলোর মধ্যে একটা পাকিস্তান আজকে প্রায় দেউলিয়া ঘোষণা করার দ্বারপ্রান্তে। অনেকেই মনে করেন এই সবকিছুর মূলে আছে একটাই কারণ সেটা হচ্ছে তাদের মিলিটারি। এটা কিভাবে হলো আর তাদের আজকের দিনে এই অবস্থানে পৌঁছানোর পেছনে কিছু পলিটিক্যাল হিস্টোরি নিয়েই আজকের এই পোস্ট। 


পাকিস্তানকে কটাক্ষ করে কোহেন এর লেখা বই

১৯৮৪ সালে Stephen Philip Cohen পাকিস্তানকে নিয়ে একটি বই লেখেন। তিনি তার এই বই এ পাকিস্তান আর্মিকে বলেন ফাইন্যাস্ট আর্মি যারা এখন পর্যন্ত কোন যুদ্ধে যেতে নাই। মানে বুঝতে পারছেন এটা একটু হলেও অপমান স্বরূপ। এই কারণে সেই সময় পাকিস্তান গভমেন্ট এটাকে ব্যান করে দেয়। কিন্তু আবার সেই সময় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ফোর্স্টার জেনারেল জিয়াউল হক। আর তিনি নিজে এই বই এর কিছু কিছু জায়গায় পাকিস্তান আর্মি কে নিয়ে লেখাগুলো এতটাই পছন্দ করেন যে কোহেন লাহোরে আসলে তাকে একসাথে লাঞ্চ করার দাওয়াতও দিয়ে বসেন। আর এই কারণে পাকিস্তানের আর্মিকে এখনও কাগজে-কলমে বেশ শক্তিশালী হিসেবে মনে করা হলেও তাদের একটা জিনিস খুবই অভাব রয়েছে সেটা হচ্ছে........ থাক আর নাই বা বললাম😂😂😂


পাকিস্তানের যুদ্ধ পরবর্তী রাজনৈতিক অবস্থা

এখন আপনাদের ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পরবর্তী কিছু ঘটনা বলি। ১৯৭২ সালে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য ভারত পাকিস্তানের মধ্যে হওয়া সিমলা চুক্তির ভিত্তিতে পাকিস্তানে ফেরত আসে। বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী মিলিটারি ফোর্স গুলোর মধ্যে একটা হিসেবে না, ৯৩ হাজার যুদ্ধবন্দি হিসেবে। পাকিস্তানের ইতিহাস এর থেকে লজ্জা জনক ঘটনা আজ অব্দি ঘটেনি। আর এর কারণে সে সময় পুরো পাকিস্তানের মানুষজন প্রচুর ট্রমাটাইস্ট, ইন্টারন্যাশনালস স্ফিয়ারে তাদের ইনফ্লুয়েন্স একদম জিরো, আর অর্থনীতির অবস্থা একদম তাল বিহীন ঝড়ের মত। সেই সময় ক্ষমতায় আসে জুলফিকার আলী ভুট্টো। আর পাকিস্তান পিপলস পার্টি কে ক্ষমতা হস্তান্তর করা ছাড়া আর কোন অপশন ছিল না যুদ্ধে হেরে যাওয়া জেনারেল ইয়াহিয়া খানের হাতে। আর এই ভুট্টোর পিপিপি ছি্লো পাকিস্তানের ইলেক্টেড সরকার । তো যাইহোক এই পার্টি কিন্তু পাঞ্জাব আর সিন্দু প্রদেশে ছাড়া দেশের অন্যান্য জায়গায় তাদের তেমন কোন ইনফ্লুয়েন্স ছিলো না। স্পেশালি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল আর বেলুচিস্তানে তাদের বিশেষ কোন নাম ধাম ও ছিলো না। এই কারণে খুব স্বাভাবিকভাবেই সেইসব এলাকায় নতুন করে পলিটিক্যাল এনিমি ক্রিয়েট হচ্ছিলো। যেটা একটা ডেমোক্রেসিতে খুবই স্বাভাবিক। যে কোন যায়গায় পলিটিকাল এনিমি ক্রিয়েট হলে তাদের রাজনৈতিকভাবেই হ্যান্ডেল করতে হবে। কিন্তু ভুট্টো হ্যান্ডেল করে তাদের মিলিটারি দিয়ে। আর নিজেরা রাজনীতির মধ্যে মিলিটারিকে ইনভল্ব করার কারণে ডেমক্রেটিক ন্যাশন হওয়া স্বত্তেও মিলিটারিরা ইন্টারনাল পলিটিক্স এ বেশ ভালোভাবেই প্রভাব রাখা শুরু করে। এদিকে ১৯৭৭ সালে নির্বাচনে ভুট্টোর দল জিতলেও পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স এ নির্বাচনকে বর্জন করে এবং একটা গণআন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করে। এর এই মোমেন্টটাকেই জেনারেল জিয়াউল হক ইউজ করে ৫ই জুলাই ১৯৭৭ সালে পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করেন এবং ১৯৭৩ সালে পাশ হওয়া সংবিধানে যেখানে পাকিস্তানের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্তের সময় জনগণের ভোট নিতে হবে বলা হয়েছিল ওই সংবিধানকে বাতিল ঘোষণা করে দেন। মানে দেখেন যেই মিলিটারি মাত্র ৬ বছর আগে বিশ্বের একমাত্র পাবলিক সারেন্ডার করেছিল তাদের চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কাছে, তারাই মাত্র ছয় বছর পর তাদের দেশ শাসন করার আবারও ক্ষমতা পেয়েছে। 

১৯৭৯ সালের ৪ঠা এপ্রিল রাতের অন্ধকারে ফাঁসিতে ঝুলানো হয় জুলফিকার আলী ভুট্টোকে। আর সেই বছর ডিসেম্বরে সোভিয়েত যখন আফগানিস্তান ইনভাইট করে পাকিস্তান হুট করে ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স এ আমেরিকার জন্য প্রচুর ইম্পর্টেন্ট অ্যালাইভ হয়ে যায়। কারণ আফগান আর সোভিয়েতদের সাথে বর্ডার শেয়ার করত তখন। একই সাথে জিয়াউল হক এই ফোকাসটাকে পাকিস্তানের সাথে আমেরিকার long-lasting একটা সম্পর্ক করার সুযোগ হিসেবে নেয়। আমেরিকার আর পাকিস্তানের এত ভালোবাসা একচুয়ালি এই টাইম থেকেই শুরু। আর এই ভালোবাসা কতটা প্রবাল চলেন আপনাদের সেইটা বোঝাই। 

গত ২০ বছরে অফিসিয়াল হিসাবে আমেরিকা ৩২ বিলিয়ন ডলার লোন দিয়েছে পাকিস্তানকে। পাকিস্তান IMF এর কাছ থেকে লোন নিয়েছে ২২ বার। আর যেখানে আপনাদের মনে আছে আমাদের এই বাংলাদেশে গত কিছুদিন আগে IMF এর কাছ থেকে লোন নেয়ার জন্য কত ধরনের শর্ত সম্মুখীন হয়েছিল। আর to be fair কোন দেশই কিন্তু খুব বেশি বিপদে না পড়লে আইএমএফ এর কাছ থেকে হাত পাতে না। যেখানে পাকিস্তান লোন নিয়েছে 22 বার। কম্পারিজন এর জন্য বলি স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের বাংলাদেশের IMF-র কাছ থেকে লোন নেওয়া লেগেছে মাত্র ৪ বার। আর এই সময়টা থেকেই পাকিস্তান মিলিটারি দেশে ইকোনমিতে ধস নামানো শুরু করে। সুজা নেওয়াজের ক্রয়াড সোডস বইতে তিনি বলেন ১৯৮০ সালের দিকে ইউনিফর্ম পড়ে বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দেয় পাকিস্তানি মিলিটারি লোকেরা। কারণ দেশের মানুষ তাদের দুর্নীতি আর ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে এতটাই ক্ষিপ্ত ছিলো।


যাইহোক ১৯৮৫ সালের মধ্যে প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক বেশকিছু চেইন আনেন এবং ১৯৮৫ সালের শেষে একটা নির্বাচনের ঘোষণা দেন এরপর থেকে মার্শল-ল উঠে যাবে এবং পাকিস্তান আবার ডেমোক্রেটিক ন্যাশন হিসেবে নতুন ভাবে যাত্রা শুরু করবে। কিন্তু এই নির্বাচন আবার কোন পার্টি জয়েন করতে পারবে না। জয়েন করবে কেবলমাত্র আলাদা আলাদা মানুষেরা। আর সেই নির্বাচনে জয় পেয়েছিল মোহাম্মদ খান জুনেজো, যে বেসিক্যালি ছিলো জিয়াউল হকের পাপেট। জিয়াউল হকের প্লান ছিলো একটা পাপেট সরকার বসিয়ে রেফারেন্ডাম পাস করিয়ে নিজেকে আরও পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট রাখবেন। আর সাথে সাথে নিজেকে পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট বানিয়ে পাকিস্তানের সংবিধানের অষ্টম আইন পাশ করেন জিয়াউল হক। যেখানে প্রেসিডেন্টকে পার্লামেন্টের যেকোন ডিসিশন কে ওভার রুল করার পুরোপুরি ক্ষমতা দেয়া হয়। আর খুব স্বাভাবিকভাবেই জিনিস কিন্তু পাকিস্তানের মানুষজন মেনে নেয় না, পাকিস্তানের অন্য পার্টিগুলোও মেনে নেয় না অর্থাৎ তাদের ডেমোক্রেসি আবারও মরে যায়। কিন্তু পাপেট সরকার হবার পরও জুনেজোর আন্ডারে পাকিস্তান আস্তে আস্তে স্ট্যাবিলিটি আসছিল। তিনি বিভিন্ন জায়গায় সিভিল সার্ভিসের মানুষজনদের প্রাধান্য দিয়ে মিলিটারি ইনফ্লুয়েন্স কমিয়ে আনছিলেন।

কিন্তু ১৯৮৮ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক তার ক্ষমতা ব্যবহার করে জুনেজোকে নামিয়ে দেন পিএম থেকে। যেটার কারণ তার এবার মনে হচ্ছিল পিএম হয়তো এবার তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আর এইটার সাথে তিনি এটাও বলে দেন জুনেজোর সরকার ইসলামিক ওয়ে অফ লাইফ ইমপ্লিমেন্ট করতে ব্যর্থ হয়েছে। তার মানে জেনারেলের এবার নতুন একজন প্রাইম মিনিস্টার লাগবে। আর দেখতে পাচ্ছেন খুব সহজেই কোন নির্বাচন ছাড়াই তাদের সরকার কিন্তু নেমে গেলো। পাকিস্তানি পলিটিশিয়ানদের অদূরদর্শিতার আরেক উদাহরণ এই ১৯৮৮ সালের কাহিনী। তারা জিয়াউল হকের ডিসিশনকে বাহবা দিচ্ছিল কারণ তারা মনে করেছিল এতে তাদের বেনিফিট। কিন্তু জিয়াউল হকের মাথায় ছিল অন্য প্ল্যান। সংবিধান মোতাবেক ৯০ দিনের মধ্যে ইলেকশন না করে সে প্ল্যান করছিল কিভাবে পার্টি বদলে আবার ১৯৮৫ সালের মতো ইন্ডিভিজুয়াল ইলেকশন করা যায়। আর এইসব প্লান চলতে চলতেই ১৯৮৮ সালের ১৭ ই আগস্ট এক প্লেন ক্রাশে জিয়াউল হকের মৃত্যু হয়। এই প্লেন ক্রাশ নিয়ে অবশ্য অনেক থিউরি আছে, অনেকে মনে করেন যে এটা কোনো অ্যাক্সিডেন্ট ছিলো না বড় একটা অ্যাসাসিনেশন ছিল। আমাদের আজকের পোস্টের টপিক এইসব কন্সপিরেসি থিওরি না। তাই চলেন যেসব টপিক সেদিকেই যাই। তো এটার পরেই আবার সবাই ভয় করে যে মিলিটারি হয়তো আবার টেকওভার করবে পাকিস্তানকে। কিন্তু না মিলিটারি এবার কিছুই করলো না।


গুলাম ইসরাত খান পাকিস্তান সিনেটের সভাপতি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং এরপর নির্বাচনে অ্যারেঞ্জ করলেন। আর সেই নির্বাচন থেকেই বেরিয়ে আসেন জুলফিকার আলী ভুট্টোর মেয়ে বেনজির ভুট্টো। পাকিস্তান আবারো আশায় বুক বাঁধে। কিন্তু বিরোধী দলের নেতা নওয়াজ শরিফের সাথে কাদা ছোড়াছুড়ি নিজের দল ভারী করার জন্য কোটি কোটি টাকা ঘুষ লেনদেন করতে করতে বেনজির ভুট্টো আর নওয়াজ শরিফ মিলে পাকিস্তানের ইকোনমি একদম গোল্লায় পাঠিয়ে দেয়। আর এ কারণে আবারো প্রেসিডেন্ট এইট এটার্ণমেন্ট ইউজ করে বেনজির ভুট্টোকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। আর কোনো নির্বাচন না করেই নওয়াজ শরিফকে প্রাইম মিনিস্টার পোস্ট দিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু নওয়াজ শরিফের সময় কিন্তু পাকিস্তানের ইকোনমিক্স ডেভলপ করা শুরু করে। GDP Growth 6.3% touch করে, ইনফ্লেশন 10 এর নিচে নামে, ফরেন ইনভেসমেন্ট বাড়ে 17.6%। আর সাথে বাড়তে থাকে নওয়াজ শরিফের পপুলারিটি। কিন্তু এইটা আবার প্রেসিডেন্টের তখন খুব একটা পছন্দ হলো না। সে বেনজির ভুট্টোর সাথে প্লান করে নওয়াজ শরিফকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দেয় ওই এইট এটেন্টমেন্ট ইউজ করে। কিন্তু এবার গেঞ্জাম লাগে সুপ্রিম কোর্টে। গোলাম ইসাহাক খান কোন শক্তিশালী কারণ দেখাতে না পারার কারণে নওয়াজ শরিফের সরকার কে পুনরায় অফিস হোল্ড করার


আদেশ দেয়া হয়। আর এই কারণে সে সময় লাখ লাখ টাকা খরচ করে বললাম ইসাহাক খান পাঞ্জাবে নেওয়াজ শরিফের পার্টির হোল্ডিং এরিয়াতে এক বিদ্রোহ করার চেষ্টা করেন। আর যেটা দিয়ে তিনি কোর্টে আপিল করেন যে নওয়াজ শরীফের সব কন্ট্রোল করতে পারছে না। কিন্তু কোর্টে ইনভেসটিকেশন দেখা যায় যে পুলিশের যতগুলো এনকাউন্টার দিয়ে এই বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল তার প্রায় সবই ফেক। এই বীভৎস কাদা ছোড়াছুড়ি মধ্যেই নেওয়াজ শরীফ এবং গোলাম ইসাহাক খান দুজনেই অবশেষে রিজাইন করা ডিসিশন নেন। যার ফলে আবারও নির্বাচন হয়। কিন্তু পাঞ্জাবের গ্যাঞ্জাম এরপর সেই জায়গার নাম শরীফের পপুলারিটি প্রায় জিরো। তাই খুব সহজেই বেনজির ভুট্টো পাকিস্তানের ক্ষমতায় চলে আসেন আবারও। এবার তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেন ফারুক আহমেদ খানকে। যিনি তার পার্টি লোকই ছিলেন। সবাই ভাবে এবার হয়তো একটু স্ট্যাবিলিটি আসবে। কিন্তু না দুর্নীতি পাকিস্তানের এই সরকার কেও দাঁড়াতে দেয়নি। জনগণের চাপে প্রেসিডেন্ট আবারও ভুট্টোকে অফিস ছাড়তে বাধ্য করেন। ফলাফল আবারও নির্বাচন আর তারপর ক্ষমতায় আসেন নওয়াজ শরিফ আবারও। ১২ বছরের মধ্যে নির্বাচন সংখ্যা ৫টা। এই পর্যন্ত শুনে আসলে আপনি বুঝতেই পারছে যে নওয়াজ শরিফের সরকার কিন্তু পাকিস্তানকে মোটামুটি ভালই হ্যান্ডেল করে। কিন্তু পাকিস্তান এমন একটি দেশ যাদের আসলে সুখে থাকলে ভূতে কিলায়। 


মিলিটারি কর্তৃত্ব গ্রহণ

১৯৯৮ সালে এইট অ্যামেন্ডমেন্ট বাতিল করা হয় আর থার্টন এমেন্ডমেন্ট দিয়ে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা আরও কমিয়ে আনা হয়। কিন্তু একই সময়ে ভারত তাদের প্রথম নিউক্লিয়ার বোম্ব টেস্ট করে। যেটার অ্যান্সারে পাকিস্তানও করে ফেলা টেস্ট। আর এই মোমেন্টাতে অনেকদিন ধরে সাইডলাইনে বসে বসে দেশের কাহিনী দেখতে থাকা পাকিস্তানি মিলিটারি আবারও সুযোগ পায় মেনস্ট্রিম রাজনীতিতে ঢুকে পড়ার। সেই সময় আর্মির চিপ জাহাঙ্গীর কেরামতের ডিমান্ডে এডমিন লেভেলের ডিসিশনে মিলিটারিকে আবারো ইনক্লুড করা শুরু হয়। যেটাতে খুব স্বাভাবিক ভাবেই নওয়াজ শরিফ রাজি হয়না। কিন্তু এর কিছুদিন আগে আবার নওয়াজ শরিফ সুপ্রিমকোর্টের চিফ জাস্টিস আর কেরামতের আগের আর্মি চিপকে পদচ্যুত করে। একই সাথে তার নিজের ফ্যামিলি রেফারেল ইত্তেফাক ইন্ডাস্ট্রি কোটি কোটি টাকা মুনাফা দেখাচ্ছিল ঐবছর। সন্দেহ দানা বাঁধে যে নওয়াজ শরিফও হয়তো দুর্নীতিগ্রস্ত। কয়েক মাসের মধ্যে জাহাঙ্গীর কেরামত রিজাইন করে আর্মি চীফ হিসেবে এবং তার জায়গায় আসে পারভেজ মোশাররফ। আর এই পারভেজ মোশাররফ ছিলেন পাকিস্তান হিস্ট্রি সবথেকে এগ্রেসিভ জেনারেলদের মধ্যে একজন। কোন লেভেলের এগ্রেসিভ সেটার একটা উদাহরণ দেই, ভারতের সাথে যে কাশ্মীর নিয়ে ক্রাইসিস তার এইটার  জন্য তার একমাত্র সলিউশন যে সরাসরি মিলিটারি দিয়ে কাশ্মীর দখল করে ফেলা।

আর নওয়াজ যখন তার এই কথা সাপোর্ট দিবে তখন না দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার টেরোরিষ্টের কারণ দেখিয়ে পাকিস্তান আবারো একটা সামরিক অভ্যূথান দেখে। সুপ্রিমকোর্ট থেকে ২০০২ সালে নির্বাচন করতে বলা হলেও পারভেজ মোশারফ ২০০১ সালে নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন। আর তার রাজত্ব এবার চলে ২০০৮ সাল পর্যন্ত। মজার একটা ব্যপার কি জানেন! ১৯৪৭ থেকে আজ পর্যন্ত পাকিস্তানে মোট ২৯ জন প্রধান মন্ত্রী হয়েছেন। আর এই ২৯ জনের মধ্যে একজনও পুরোপুরি ৫ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারে নি। অর্থাৎ ৮০ বছরের ইতিহাসে একটা প্রাইম মিনিস্টারও তাদের পুরোপুরি ক্ষমতার সময়কাল শেষ করতে পারে নি। তাহলে বঝেন পাকিস্তানের পলিটিক্যা অবস্থা কিরকম! এর মধ্যে কেবলমাত্র ১৯৯৩ সালে ৫ বার ক্ষমতা পরিবর্তন হয়, আর সবশেষ আমরা দেখেছি ইমরান খানকেও কিন্তু তার ক্ষমতা থেকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এই ইমরান খানও কিন্তু ক্ষমতায় এসেছেন আর্মির ব্যাকাপেই। আর ক্ষমতা থেকে নেমে যাওয়ার আগে কিন্তু তিনি এই আর্মির বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করেছিলেন। 


কিভাবে মিলিটারির জন্য পাকিস্তানের এমন পতন ঘটলো

আর বলবেই বা কেনো! গুগল আর মাইক্রোসফট হচ্ছে আমেরিকার সবচেয়ে বড় কম্পানি গুলোর মধ্যে একটা। আর পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় কম্পানি কি জানেন? তাদের মিলিটারি। হ্যা তাদের ভ্যালুয়েশন ১০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। ২০১৬ সালে সিনেট কে জানানো হয় পাকিস্তানি মিলিটারি পাকিস্তানে কম করে হলেও ৫০ টার মতো বিজনেস অর্গানাইজেশন চালাচ্ছে। যেগুলোর মোট ভ্যালু ২০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। আর অন্যদিকে সেই বছর পাকিস্তানের ফরেন রিজার্ভই ছিলো ২৪ বিলিয়ন ডলার। মানে বোঝেন অবস্থা, পেট্রল পাম্প থেকে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন, স্কুল, ভার্সিটি, হাসপাতাল, ব্যাংক, সিমেন্ট প্লান্ট, ফার্ম সবকিছুর মধ্যেই যেটা সাক্সেস্ফুল সেটা হলো মিলিটারি। কিন্তু তাদের সবচেয়ে প্রফিটেবল বিজনেস হলো রিয়াল স্টেট। দেশের ৮টা বড় শহরে সবথেকে প্রাইম যায়গাগুলোই হলো মিলিটারির হাতে। এমনকি তাদের বিভিন্ন এওয়ার্ড এর সাথে জমিজমা গিফট করার কাহিনীও একদম নরমাল। এমনকি পাকিস্তানের টোটাল ল্যান্ডমাসের ১২% বিভিন্ন আর্মি জেনারেল বা সিনিয়র অফিসারের মালিকানাধীন। অনেক সময় তারা এই ল্যান্ডগুলো একদম চড়া দামে বড়লোকদের কাছে বেচে দিতো, তারপর সেই টাকা নিয়ে তারা মেইনস্ট্রিম বিজনেসে ঢুকতো। 


এখন দেখেন পাকিস্তানের ন্যাশনাল লজিস্টিক সেল দ্য ফ্রন্টিয়ার ওয়ার্ক অর্গানাইজেশন, স্পেশাল কমিউনিকেশন অর্গানাইজেশন এমনকি WAPDA - ওয়াটার এন্ড পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অথোরিটিও ১৯৫৮ সাল থেকে প্রায় ৩৫ হাজার কর্মী নিয়েই পাকিস্তান মিলিটারির আন্ডারেই অপারেট করছে। এছাড়াও ২০০৭ সালে ন্যাশনাল লজিস্টিক সেল কোনো ওপেন মিটিং ছাড়াই নিজেদের পছন্দের একটা ডেভেলপারকে করাচির কাছে নর্দান বাইপাস ব্রিজ বানানোর ডিল দেয়। ব্রিজ বানানোর একমাসের মধ্যেই সেটা ভেংগে পড়ে ৭ জন মারা যায় আর আহত হয় ২৭ জন। কিন্তু এইটার জন্য কোন কেইসও করা হয় না আবার কোন ইনভেস্টিগেশনও হয় না। এমনকি ২০০৭ সালের বেনজির ভুট্টোর অ্যাসাসিনেশনেও পাকিস্তানি মিলিটারির হাত ছিলো কিনা সেটার জবাবে এর ১২ বছর পর পারভেজ মোশারফ বলেন "Possibility, Yes indeed. Because the society is polarised on religious lines". তিনি তালেবানদেরকে একটা দায় দেন। কিন্তু পারভেজ মোশারফ আসলে এর পরবর্তীতে দেশ ছেড়েই চলে যান। যার কারণে এই কেইস এখনো আনসল্ভ। আর এরই মধ্যে ২০১৩ সালে ভুট্টো অ্যাসাসিনেশন কেসের লিড প্রসিকিউশন চৌধুরি জুলফিকারকেও অ্যাসাসিনেট করা হয়। কে করেছে Nobody knows, Nobody cares. এখন আপনাদের মনে হতে পারে যে একটা দেশের মিলিটারি কমার্সিয়ার অ্যাক্টিভিটিতে যোগ দিতেই পারে এখানে তো কোন বাধা নাই, অনেক দেশেই হয়। এইটা চীনেও হয়েছিলো। কিন্তু তারা যখন দুর্নীতি করা শুরু করবে তখন সেটাকে আপনি কিভাবে হ্যান্ডেল করবেন সেটা ম্যাটার করে।

পাকিস্তানি মিলিটারি তাদের লেজিস্টলেটিভ অথোরিটি কতটুকু কন্ট্রল করে সেটার আরেকটা উদাহরণ দেই আপনাদের,
এখন যে তারা IMF কাছ থেকে লোন নেবার জন্য হাত পাতছে এরই মধ্যে কিন্তু তাদের বাজেট পাশ করা হয়েছে। সেই বাজেটের ১৭% তাদের ডিফেন্সে বরাদ্দ করা হয়েছে ১৫২৩ বিলিয়ন রুপি। যেখানে ইন্ডিয়া বরাদ্দ দেয় ১৩% আর আমেরিকা কখনো ৫% এর বেশি বরাদ্দ দেয়ই না। সেখানে দেউলিয়া হওয়ার অবস্থাতেও পাকিস্তান বরাদ্দ দেয় ১৭%। আর তাছাড়াও পারভেজ মোশারফ যখন ক্ষমতায় ছিলো তিনি এই মিলিটারি বাজেট থেকে মিলিটারি পারসোনালের জন্য যে পেনশনের টাকা আছে সেটাও আলাদা করে দিয়েছেন। টোটাল পেনশনের জন্য যেই আলাদা বাজেট রাখা আছে তারও আবার ৮০% যায় এই মিলিটারির পকেটেই। এখন পেনশনের জন্য বাজেট কত? টোটাল ৬.৫%। যেটার আবার ৮০% পাকিস্তানি মিলিটারির হাতেই যাচ্ছে। এমনকি তাদের নিউক্লিয়ার প্রগ্রামের জন্য যেই টাকা সেটাও আবার এই মিলিটারি বাজেট থেকে কাটা হয় না। অন্যসব সেক্টর থেকে একটু এক্টূ করে কেটে নিয়ে সেটা নিউক্লিয়ার প্রজেক্টের টাকা ওঠে। এখন এত কিছুর পর আপনাদের মনে হতে এই এই সেক্টর গুলোর পারফরমেন্স কেমন? এটা নিয়ে আসলে আমার কথা বলার কিছু নাই কারণ পুরা ইন্টারনেট আসলে এইসব কেলেংকারি দিয়ে ভরা। যেমন তাদের সাউদার্ন কোম্পানি ২০১৬ সালে ২০০ মিলিয়ন রুপি গায়েব করে দেয়। ট্রেবল ড্যামে দুর্নীতি যেটার কারণে ৭৫৩ মিলিয়ন ডলার লচ যায়। এমনকি পাকিস্তান এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে ফেক পাইলট লাইসেন্স দেওয়ার খবরও বেশ পুরাতন হয়ে গিয়েছে। 

Post a Comment

Previous Post Next Post