প্রথমবার গর্ভকালীন সময়ে করনীয় বিষয় গুলো কি কি

প্রথমবার গর্ভকালীন সময়ে করনীয়



মেয়েদের বৈবাহিক জীবনের পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গর্ভকালীন পর্যায়। এই পর্যায় যেমন খুব গুরুত্বপূর্ণ তেমনি এই পর্যায়টি খুবই সেনসিটিভ। এই সময় প্রসূতি মহিলাদের বিশেষ যত্নের খুবই প্রয়োজন। এমনকি এই সময়টাতে নারীরা এতটাই উদ্বিগ্ন অবস্থায় থাকেন যে কখন কি করতে হবে যেমনটা তারা অনেকেই জানেন না। মানসিক চাপ, ভয়, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত আবেগ ইত্যাদি প্রসূতিকালীন সময়ে মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এসব এড়িয়ে গিয়ে ভালো কিছু চিন্তা করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খেতে হবে। এই সময় পানিশূন্যতা রোধ করতে বেশি করে পানি পান করতে হবে। সকল প্রকার ঝুঁকি পরিহার করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 
প্রেগন্যান্সি বিষয়টা যেহেতু খুবই সেনসিটিভ তাই এই অবস্থায় অনেকেই আতংকিত হয়ে পড়েন। এমতাবস্থায় আতংক-গ্রস্ত না হয়ে কিছু পরামর্শ মেনে চললে যার অধিকাংশই প্রতিকার বা প্রতিরোধ করা যায়।


    গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকাঃ

    গর্ভকালীন সময়ে মহিলাদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অতিব জরুরি। কারণ, এই সময় প্রথম তিন মাসে শিশুর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গঠন হয়। এই সময় গর্ভের শিশুর বিকাশ যেন ঠিকঠাক মতো হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। গর্ভবতী মাকে অবশ্যই ভিটামিন ও মিনারেল বিশেষ করে আয়রন, ফলিক এসিড, ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খেতে হবে। যাতে করে গর্ভস্থ শিশু যেন এগুলো পায়। মুলাশাক, সরিষা শাক, বাধা কপি,  বরবটি, শিম, ব্রকলি গাজর, লেবু, পুইশাকের মতো খাবারগুলো আহার করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে এসব খাবার যেন ফরমালিন মুক্ত হয়। অথবা বাজার থেকে শাকসবজি কেনার পর বাড়িতে এনে সেই শাকসবজি গুলো অন্তত আধঘন্টা ভিজিয়ে রাখলে ফরমালিন ঝুঁকি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। গর্ভকালীন সময় মহিলাদের উচিত প্রচুর পরিমানে বিশুদ্ধ পানি পান করা। তার সাথে অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার পরিহার করাই উত্তম।

    চেষ্টা করতে হবে যেন গর্ভকালীন সময়ে পেট যাতে খালি না থাকে। অল্প করে সবসময়ই যেন ভাত, দুধ, রুটি, মাছ, কিংবা মাংস খেতে চেষ্টা করবেন।


    চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াঃ

    গর্ভকালীন সময়ে যথাসম্ভব ডাক্তারের সন্নিধ্যে থাকার চেষ্টা করা উচিত। নিয়মিত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।  এই সময়টায় খুবই সাবধানে চলাফেরা করতে হবে। বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে খাওয়া দাওয়ার ব্যপারে। ঝুঁকি এড়াতে ডাক্তারের পরামর্শে চললে আপনার আর আপনার সন্তানের কোনো ক্ষতি হবে না। নয়তো সামান্য একটি ভুলের কারণ আপনার ও আপনার সন্তানের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
    এই ব্যপারে অবহেলা না করে প্রতিমাসে একবার অন্তত গাইনোকোলজিস্ট দেখানো উচিত। 


    গর্ভকালীন টিকা নিনঃ

    গর্ভকালীন সময়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে টিকা নিতে হবে। টিকার মাধ্যমে শিশুদের ফ্লু ও ধনুস্টংকার রোগসহ নানান রোগ হতে রক্ষা করা সম্ভব। এর ফলে গর্ভাবস্থায় মায়ের কোনো সমস্যা হবে না।  এই টিকাগুলো নিলে আপনি কোনমতেই দুর্বল হবেন না, বরং মানসিক ও শারীরিকভাবে উপকৃত হবেন। তাই কালেক্ষেপন মা করে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী টিকা নেওয়া জরুরি।  নয়তো শিশু শারীরিক সমস্যা নিয়ে জন্মাতে পারে। কেননা গর্ভাবস্থায় মায়ের একটু ভুল অথবা স্বাস্থ্যের প্রভাব শিশুর উপর পড়তে পারে। 


    গর্ভাবস্থায় রক্তপাত ঘটলে কি করবেনঃ

    গর্ভাবস্থায় রক্তপাত সাধারণত ঘটে না। কিন্তু কখনো কখনো গর্ভাবস্থায় রক্তপাতের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এই অবস্থায় আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। অনেক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গর্ভাবস্থায় রক্তপাত ঘটলেও গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি নেই। তাই এই ধরনের ঘটনা ঘটলে বা ঘটে থাকলে বিচলিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে সমাধান পাওয়া যাবে।

                                                  আরো পড়ুনঃ অসুস্থতা নিজেই পালাবে ৯ টি উপায় অবলম্বন করুন

    পরিমিত হালকা ধরনের কাজঃ

    গর্ভকালীন সময়ে শারীরিক ব্যায়াম, হাটাচলা প্রয়োজন। সারাদিন বসে ও শুয়ে না থেকে ছোট ছোট কাজ করা যেতে পারে। তাই বলে ভারী জিনিস তোলা বা বহন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। পিচ্ছিল যক্ত স্থানে হাটা ও চলাচল পরিহার করতে হবে। সিড়ি বেয়ে উঠতে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। হালকা ব্যয়াম করলে অস্বস্তি ভাব কম হবে এবং গর্ভকালীন ব্যথা হতে নিরাময় মিলবে। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। 


    পর্যাপ্ত ঘুমঃ 

    গর্ভকালীন সময়ে রাতে আট ঘন্টা এবং দিনে অন্তত দুই ঘন্টা ঘুমানো উচিত। এতে করে পর্যাপ্ত ঘুম হবে এবং শরীর ও মন ভালো থাকবে।


    মানসিক প্রশান্তিঃ

    গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত আবেগ, ভয়, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি পরিহার করতে হবে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ আপনার গর্ভের সন্তানের জন্য ঝুঁকিসরূপ। মানসিক চাপের কারণে ব্লাড প্রেসার বা হাই প্রেসার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
    আবার গর্ভকালীন সময়ে রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যেতে পারে। তাই প্রসূতি মায়ের উচিত এমন কিছু শোনা বা করা হতে বিরত থাকা যাতে আপনার মানসিক স্বাস্থের জন্য ক্ষতির কারণ না হয়।


    ভ্রমণ করার সময় সতর্কতাঃ

    গর্ভকালীন সময় ভ্রমণ করার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। 
    বিশেষ করে প্রথম তিন মাস ও শেষের তিন মাস দীর্ঘ ভ্রমণ না করাই উত্তম। উচু নিচু পথ কিংবা ঝাকির আশঙ্কা রয়েছে এরকম কোনো যানবাহন কিংবা গড়িতে ভ্রমণ করা সম্পুর্ন ঝুকিপূর্ণ এবং সেই সাথে আপনার স্বাস্থের জন্যও ক্ষতিকর। তাই এসময় উচিত হবে মনোরম পরিবেশে ভ্রমণ করা যাতে মন প্রফুল্ল থাকে। 


    পরিশেষে কিছু কথাঃ

    মনে রাখবেন, সন্তান সবার কাছে মহা মুল্যবান। সবাই চাইবে সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে। তাই কষ্ট হলেও সবকিছু সাবধানে মেনে চলার অভ্যাস করতে হবে। নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং যোগাযোগ রাখতে হবে। ভয় বা চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রাখুন এবং সবার আগে নিজের যত্ন নিন। 

    মনে রাখবেন আপনি ভালো থাকলেই ভালো থাকবে আপনার সন্তানও।

                                    আরো পড়ুনঃ ওজন কিভাবে বাড়ানো যায়? 

    Post a Comment

    Previous Post Next Post